১৫২ বছর পর আজ আবার রক্তাভ চাঁদের সাক্ষী হতে যাচ্ছে পৃথিবীবাসী

                                         

১৫২ বছর পর আজ আবার রক্তাভ চাঁদের সাক্ষী হতে যাচ্ছে পৃথিবীবাসী
প্রায় ১৫২ বছর পর আজ (বুধবার) আরেকটি বিরল মুহূর্তের সাক্ষী হতে যাচ্ছে বিশ্ব। আজ রাতে একইসময়ে ব্ল মুন, সুপারমুন ও চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে। একই সময়ে বুধবার পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেখা যাবে বিশাল আকারের নীলাভ উজ্জ্বল চাঁদ। সেইসঙ্গে দেখা যাবে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণও।
সাধারণত আমরা প্রতি মাসে একটি পূর্ণিমা দেখতে পাই, কিন্তু কখনও কখনও একই মাসে দু’টি পূর্ণিমা ঘটে থাকে। মাসের এই দ্বিতীয় পূর্ণিমাটিই হচ্ছে ব্ল মুন। চাঁদ পৃথিবীর সবথেকে কাছে চলে আসার অবস্থাকে সুপারমুন আখ্যা দিয়েছে জ্যোতির্বিজ্ঞান।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, উপবৃত্তাকার কক্ষপথে পৃথিবী থেকে চাঁদের এই নিকটতম অবস্থানকে অনুভূ বা পেরিজি বলা হয়। চাঁদ যখন পৃথিবীর খুব কাছে অবস্থান করে তখন চাঁদকে পৃথিবী থেকে তুলনামূলকভাবে অনেক বড় আর উজ্জ্বল দেখায়। পূর্ণ গোলাকার চাঁদের এই অবস্থাকে সুপারমুন বলা হয়। আর পৃথিবী যখন পরিভ্রমণরত অবস্থায় কিছু সময়ের জন্য চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে, তখন পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য একই সরল রেখায় অবস্থান করে। পৃথিবী থেকে তাকালে চাঁদকে আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে কিছু সময়ের জন্য অদৃশ্য মনে হয়। এই ঘটনাকে চন্দ্রগ্রহণ বলা হয়। এই তিনটি মহাজাগতিক ঘটনা ৩১ জানুয়ারি একইসঙ্গে ঘটতে যাচ্ছে যা অপরিচিত না হলেও বিরল।
বাংলাদেশের আকাশেও দেখা যাবে বিরল মহাজাগতিক দৃশ্য। ঢাকায় স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৫টা ৪৮ মিনিটে আংশিক ও ৬টা ৫১ মিনিটে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ শুরু হবে। পূর্ণ গ্রহণের মধ্যবর্তী সময় হবে ৭টা ২৯ মিনিটে। চন্দ্রগ্রহণ স্থায়ী হবে মোট ১ ঘণ্টা ১৬ মিনিট। রাত ১০টা ৮ মিনিটে গ্রহণের উপচ্ছায়া পর্যায় শেষ হবে।
এ ছাড়া ৩১ জানুয়ারি সূর্যাস্তের আগে উত্তর আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চল থেকে একসঙ্গে দেখা যাবে এ বিরল দৃশ্য। আর আন্তর্জাতিক তারিখরেখার কারণে সূর্যাস্তের পর এশিয়ার মধ্য ও পূর্বাঞ্চল, ইন্দোনেশিয়া, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় এ দৃশ্য দেখা যাবে।

বিজ্ঞানীরা জানান, একসঙ্গে চাঁদের এই তিন অবস্থা অবলোকন বিরল ঘটনা। এ সময় পূর্ণগ্রাস গ্রহণের পাশাপাশি চাঁদকে স্বাভাবিকের তুলনায় আকারে ১৫ ভাগ বড় এবং ৩০ ভাগ উজ্জ্বল ও লালচে কমলা দেখাবে। যার নামকরণ করা হয়েছে ‘ট্রাইফিকটা’ বা ‘সুপার ব্লু ব্লাড মুন’। এই তিন মহাজাগতিক দৃশ্য সর্বশেষ একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল ১৮৬৬ সালে।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের অনুসন্ধিৎসু চক্রের জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি মো. শাহজাহান মৃধা জানান, সূর্যগ্রহণ খালি চোখে দেখা ক্ষতিকর হলেও চন্দ্রগ্রহণ তা নয়। চন্দ্রগ্রহণ দেখতে বাইনোকুলার বা টেলিস্কোপ আবশ্যক নয়, তবে পরিস্কারভাবে দেখতে সেগুলোর ব্যবহার করা যেতে পারে। ছবি তোলার জন্য যে কোনো জুমলেন্সসহ ক্যামেরাই যথেষ্ট। এই গ্রহণ পর্যবেক্ষণের জন্য অনুসন্ধিৎসু চক্র নানা প্রস্তুতি নিয়েছে।

তিনি জানান, রাজধানীর কেন্দ্রীয় ও বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পটি হবে মান্ডার গ্রিন মডেল টাউনে। মেঘমুক্ত আকাশ থাকা সাপেক্ষে ক্যাম্প সন্ধ্যা ৫টা ৩৭ মিনিটে শুরু হয়ে শেষ পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। চাঁদ যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য ক্যাম্পে ১৪ ইঞ্চি এবং ৮ ইঞ্চি মিড ক্যাসিগ্রেইন টেলিস্কোপ, ৬ ইঞ্চি ওরিয়ন টেলিস্কোপ ও ফটোমিটার থাকবে। এ ছাড়াও গ্রহণ চলাকালে কেন্দ্রীয় ক্যাম্পে বড় পর্দায় ও অনুসন্ধিৎসু চক্রের ফেসবুক পেজে সরাসরি তা সম্প্রচারের ব্যবস্থা থাকবে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.