Biometrics


বায়োমেট্রিক্স – বায়োমেট্রিক্স হলো বায়োলজিক্যাল ডেটা পরিমাপ এবং বিশ্লেষণ করার প্রযুক্তি। বায়োমেট্রিক্স হলো এমন একটি প্রযুক্তি যেখানে কোন ব্যক্তির শারীরিক কাঠামো এবং আচরণগত বৈশিষ্ট্য এর উপর ভিত্তি করে তাকে অদ্বিতীয়ভাবে চিহ্নিত করা হয়। গ্রীক শব্দ “bio” যার অর্থ- Life- প্রাণ ও “metric” যার অর্থ-পরিমাপ করা।
খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অব্দে ব্যবিলিয়ানরা ব্যবসায়িক কাজে ছোট ছোট শুকনো কাদার খন্ডে দিয়ে থাকতো- আঙ্গুলের ছাপ । ১৮৯১ সালে আর্জেন্টিনার Juan Vucetich দিয়ে অপরাধী ধরার পদ্ধতি আবিস্কার করার মাধ্যমে আধুনিক যুগের আঙ্গুলের ছাপের ব্যবহার শুরু করেন।
বায়োমেট্রিক্স সিস্টেমে সনাক্তকরণে বিবেচিত বায়োলজিক্যাল ডেটা গুলিকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা হয়-
১। গঠনগত বৈশিষ্ট্য
ফেইস রিকগনিশন
ফিংগার প্রিন্ট
হ্যান্ড জিওমিট্রি
আইরিস এবং রেটিনা স্ক্যান
ডি.এন.এ
2। আচরণগত বৈশিষ্ট্য
ভয়েস রিকগনিশন
সিগনেচার ভেরিফিকেশন
টাইপিং কীস্ট্রোক
ফেইস রিকগনিশন – সৃষ্টিকর্তা একজন মানুষের মুখমন্ডলের সাথে অন্য কোন মানুষের মুখমন্ডলের ভিন্নতা দিয়েছেন । ফেইস রিকোগনিশন সিস্টেম হচ্ছে- এক ধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রাম যার সাহায্যে মানুষের মুখের গঠন প্রকৃতি পরীক্ষা করে তাকে সনাক্ত করা হয়। এই পদ্ধতিতে কোন ব্যবহারকারীর মুখের ছবিকে কম্পিউটারে সংরক্ষিত ছবির সাথে দুই চোখের মধ্যবর্তী দূরত্ব, নাকের দৈর্ঘ্য এবং ব্যাস, চোয়ালের কৌণিক পরিমাণ ইত্যাদি তুলনা করার মাধ্যমে কোন ব্যক্তিকে সনাক্ত করা হয়।
সুবিধা-
★ফেইস রিকোগনিশন সিস্টেম সহজে ব্যবহারযোগ্য।
★এই পদ্ধতিতে সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়।
অসুবিধা-
★ক্যামেরা ছাড়া এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায় না এবং আলোর পার্থক্যের কারণে জটিলতার সৃষ্টি হয়।
★মেকআপ ব্যবহার , গহনা ব্যবহার ইত্যাদির কারণে অনেক সময় সনাক্তকরণে সমস্যা হয়।
ব্যবহার-
★কোন বিল্ডিং বা কক্ষের প্রবেশদ্বারে।
★কোন আইডি নম্বর সনাক্তকরণে ।
ফিঙ্গার প্রিন্ট – একজনের আঙ্গুলের ছাপ বা টিপসই অন্য কোন মানুষের আঙ্গুলের ছাপের বা টিপসইয়ের সাথে মিল নেই। এই প্রক্রিয়ায় প্রথমেই আঙ্গুলের ছাপ ডেটাবেজে সংরক্ষণ করা হয় এবং পরবর্তীতে ফিঙ্গার প্রিন্ট রিডার এর মাধ্যমে আঙ্গুলের ছাপ ইনপুট নিয়ে ডেটাবেজে সংরক্ষিত আঙ্গুলের ছাপের সাথে তুলনা করে কোন ব্যাক্তিকে চিহ্নিত করা হয়।
ফিঙ্গার প্রিন্ট রিডার – ফিঙ্গার প্রিন্ট রিডার হচ্ছে বহুল ব্যবহৃত একটি বায়োমেট্রিক ডিভাইস যার সাহায্যে মানুষের আঙ্গুলের ছাপ বা টিপসই এগুলিকে ইনপুট হিসাবে গ্রহণ করে তা পূর্ব থেকে সংরক্ষিত আঙ্গুলের ছাপ বা টিপসইয়ের সাথে মিলিয়ে পরীক্ষা করা হয় ।
সুবিধা-
♦খরচ তুলনামূলক কম।
♦সনাক্তকরণের জন্য সময় কম লাগে।
♦সফলতার পরিমাণ প্রায় শতভাগ।
অসুবিধা-
♦আঙ্গুলে কোন প্রকার আস্তর লাগানো থাকলে ♦সনাক্তকরণে সমস্যা হয়।
♦ছোট বাচ্চাদের জন্য উপযুক্ত নয়।
ব্যবহার-
♦কোন প্রোগ্রাম বা ওয়েবসাইটে ইউজার নেইম এবং ♦পাসওয়ার্ডের পরিবর্তে আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহার।
♦প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ ।
♦ব্যাংকিং পেমেন্ট সিস্টেমে।
♦ডিএনএ সনাক্ত করার কাজে।
হ্যান্ড জিওমিট্রি – মানুষের হাতের আকৃতি ও জ্যামিতিক গঠনেও ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। বায়োমেট্রিক ডিভাইস দ্বারা হ্যান্ড জিওমিট্রি পদ্ধতিতে মানুষের হাতের আকৃতি বা জ্যামিতিক গঠন ও হাতের সাইজ ইত্যাদি নির্ণয়ের মাধ্যমে মানুষকে সনাক্ত করা হয়। এই পদ্ধতিতে হ্যান্ড জিওমেট্রি রিডার হাতের দৈর্ঘ্য,প্রস্থ, পুরুত্ত ইত্যাদি পরিমাপ করে ডেটাবেজে সংরক্ষিত হ্যান্ড জিওমেট্রির সাথে তুলনা করে ব্যক্তি সনাক্ত করে ।
সুবিধা-
♥ব্যবহার করা সহজ।
♥সিস্টেমে অল্প মেমোরির প্রয়োজন।
অসুবিধা-
♥ডিভাইস গুলোর দাম তুলনামূলক বেশি।
♥ফিংগার প্রিন্ট এর চেয়ে ফলাফলের সূক্ষ্মতা কম।
ব্যবহার-
♥এয়ারপোর্টের আগমন-নির্গমন নিয়ন্ত্রণ ।
♥বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরীজীবীদের উপস্থিতি নির্ণয়ে ।
♥বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং লাইব্রেরিতে।
চোখের আইরিস এবং রেটিনা স্ক্যান-
বায়োমেট্রিক্স প্রযুক্তিতে সনাক্তকরনের জন্য চোখের আইরিসকে আদর্শ অঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করা হয়।একজন ব্যক্তির চোখের আইরিস এর সাথে অন্য ব্যক্তির চোখের আইরিস এর প্যাটার্ন মিলবে না। আইরিশ সনাক্তকরণ পদ্ধতিতে চোখের চারিপার্শ্বে বেষ্টিত রঙিন বলয় বিশ্লেষণ ও পরীক্ষা করা হয় এবং রেটিনা স্কান পদ্ধতিতে চোখের পিছনের অক্ষিপটের মাপ ও রক্তের লেয়ারের পরিমাণ বিশ্লেষণ ও পরিমাপ করা হয়। উভয় পদ্ধতিতে চোখ ও মাথাকে স্থির করে একটি ডিভাইসের সামনে দাড়াতে হয়।
সুবিধা-
♠সনাক্তকরণে খুবই কম সময় লাগে।
♠সনাক্তকরণে ফলাফলের সূক্ষ্মতা ফিংগার প্রিন্ট এর থেকে তুলনামুলকভাবে অনেক বেশি।
♠এটি একটি উচ্চ নিরাপত্তামূলক সনাক্তকরণ ব্যবস্থা যা স্থায়ী।
অসুবিধা-
♠এই পদ্ধতি অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
♠তুলনামূলকভাবে বেশি মেমোরি প্রয়োজন।
♠ডিভাইস ব্যবহারের সময় চশমা খোলার প্রয়োজন হয়।
ব্যবহার-
♠এই পদ্ধতির প্রয়োগে পাসপোর্টবিহীন এক দেশের সীমা অতিক্রম করে অন্য দেশে গমন করা যেতে পারে যা বর্তমানে ইউরোপে ব্যবহিত হয়েছে।
♠এছাড়া সরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, মিলিটারি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদিতেও সনাক্তকরণ কাজে ব্যবহার করা হয়।
ডিএনএ – ডিএনএ ফিংগার প্রিন্টিং এর সাহায্যে মানুষ চেনার বিষয়টি অনেক বেশি বিজ্ঞান সম্মত। কোন মানুষের দেহ কোষ থেকে ডিএনএ আহরণ করার পর তার সাহায্যেই কতিপয় পর্যায়ক্রমিক পদ্ধতি অনুসারে ঐ মানুষের ডিএনএ ফিংগার প্রিন্ট তৈরি করা হয়। মানব দেহের রক্ত, চুল, একবার বা দুবার পরা জামা কাপড় থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করা।
সুবিধা
ডিএনএ ফিংগার প্রিন্টিং তৈরি ও সনাক্তকরণের জন্য কিছু সময় লাগে।
★পদ্ধতিগত কোন ত্রুটি না থাকলে সনাক্তকরণের ★সফলতার পরিমাণ প্রায় শতভাগ।
অসুবিধা-
♦ডিএনএ প্রফাইলিং করার সময় পদ্ধতিগত ত্রুটি ডিএনএ ফিংগার প্রিন্টিং এর ত্রুটির সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
♦সহোদর যমজদের ক্ষেত্রে ডিএনএ ফিংগার প্রিন্টিং সম্পূর্ণ এক হয়।
♦তুলনামূলক খরচ বেশি।
ব্যবহার-
♥অপরাধী সনাক্তকরণে
♥পিতৃত্ব নির্ণয়ে
♥বিকৃত শবদেহ শনাক্তকরণে
♥লুপ্তপ্রায় প্রাণীদের বংশ বৃদ্ধির জন্য
♥চিকিৎসা বিজ্ঞানে
সিগনেচার ভেরিফিকেশন – সিগনেচার ভেরিফিকেশন পদ্ধতিতে হাতে লেখা স্বাক্ষরকে পরীক্ষা করা হয়। এই পদ্ধতিতে স্বাক্ষরের আকার, লেখার গতি, লেখার সময় এবং কলমের চাপকে পরীক্ষা করে ব্যবহারকারীর স্বাক্ষর সনাক্ত করা হয়। একটি স্বাক্ষরের সকল প্যারামিটার ডুপ্লিকেট করা সম্ভব নয়। এই পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হয় বিশেষ ধরণের একটি কলম এবং প্যাড বা টেবলেট পিসি ।
সুবিধা-
♣ইহা একটি সর্বস্থরের গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি ।
♣এই পদ্ধতি ব্যবহারে খরচ কম।
♣সনাক্তকরণে কম সময় লাগে।
অসুবিধা-
♠যারা স্বাক্ষর জানে না তাদের জন্য এই পদ্ধতি ♠ব্যবহার করা যায় না।
ব্যবহার-
♦ব্যাংক-বীমা এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে স্বাক্ষর ♦সনাক্তকরণের কাজে এই পদ্ধতি ব্যবহার হয়ে থাকে।
ভয়েস রিকোগনিশন- ভয়েস রিকোগনিশন পদ্ধতিতে সকল ব্যবহারকারীর কন্ঠকে, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এর সাহায্যে ইলেক্ট্রিক সিগন্যালে রুপান্তর করে প্রথমে ডেটাবেজে সংরক্ষণ করতে হয় এবং একজন ব্যবহারকারীর কণ্ঠকে ডেটাবেজে সংরক্ষিত ভয়েস ডেটা ফাইলের সাথে তুলনা করে কোন ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়।
সুবিধা-
♦সহজ ও কম খরচে বাস্তবায়নযোগ্য সনাক্তকরণ পদ্ধতি।
অসুবিধা-
♠অসুস্থতা জনিত কারনে কোন ব্যবহারকারীর কন্ঠ ♠পরিবর্তন হলে সেক্ষেত্রে অনেক সময় সঠিক ফলাফল পাওয়া যায় না।
♠সূক্ষ্মতা তুলনামূলকভাবে কম।
ব্যবহার-
♥অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই পদ্ধতি ব্যবহার করে।
♥টেলিফোনের মাধ্যমে লেনদেনের ক্ষেত্রে ভয়েস
 রিকোগনিশন সিস্টেম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
♥টেলিকমিউনিকেশন সিস্টমের নিরাপত্তায়।
বয়োমেট্রিক্স সিষ্টেম বাস্তবায়নের
জন্য যা প্রয়োজনঃ
১। কম্পিউটার
২। ইন্টারনেট সংযোগ
৩। ওয়েব ক্যামেরা
৪। স্ক্যানার
৫। বায়োসেন্সর নির্নয়ের ডিভাইস।
বায়োমেট্রিক্স ব্যবহারের
ক্ষেত্রসমূহঃ
১। প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ
২। অফিসের সময় ও উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণ
৩। পাসপোর্ট তৈরি
৪। ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি
৫। ব্যাংকের লেনদেন নিরাপত্তা
৬। ATM বুথে নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ
৭। আবাসিক নিরাপত্তা নিয়ন্তণ
৮। কম্পিউটার ডাটাবেজ নিয়ন্ত্রণ
বায়োমেট্রিক্স মেকানিজম- এই পদ্ধতিতে মানুষের বায়োলজিক্যাল ডেটা সংরক্ষিত করে রাখা হয় কম্পিউটারের ডেটাবেজে। একটি বায়োমেট্রিক ডিভাইস কোন ব্যক্তির ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যগুলোকে রুপান্তর করে ডিজিটাল কোডে এবং এই কোডকে তুলনা করে- কম্পিউটারে সংরক্ষিত কোডের সাথে। যদি ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত কোড কম্পিউটারে সংরক্ষিত কোডের সাথে মিলে যায়- তবে তাকে ডিভাইস ব্যবহারের অনুমতি দেয় বা সনাক্ত করতে সক্ষম হয়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.